দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ
গাবতলী (বগুড়া)থেকে আতাউর রহমান ঃ কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। জমি চাষের কাজে কৃষকেরা এক সময় কাঠের তৈরী লাঙল, জোয়াল, মই ও হালের বলদ ব্যবহার করতো। চাষাবাদের এসব কৃষি উপকরণ মানুষ হাজার বছর ধরে ব্যবহার করে এসেছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসবের ব্যবহার আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। পরিবেশ বান্ধব লাঙল-জোয়ালের জায়গা দখল করে নিয়েছে যান্ত্রিক পাওয়ারটিলার আর ট্রাক্টর। আগে লাঙল ছাড়া চাষাবাদের কথা চিন্তা করা যেত না। কিন্তু আধুনিক যুগে চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারের মতো যান্ত্রিক সব উপকরণ আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে চাষাবাদে আগের তুলনায় সময়, শ্রম এবং অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে কৃষক আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদ করছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী লাঙল, জোয়াল, মই ও হালের বলদ। বর্তমানে গ্রাম বাংলার প্রায় সব কৃষক জমি চাষের জন্য ট্রাক্টর ব্যবহার করেন। ব্যাপক চাহিদা থাকায় কেউ কেউ যন্ত্রটি ভাড়া দিয়ে ব্যবসাও করছেন। লাঙল-মইসহ কৃষি সরঞ্জাম তৈরি করা যাদের পেশা তারা এখন বেশির ভাগ সময় বেকার বসে থাকছেন। ফলে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে নতুন পেশায় চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। এভাবে হয়তো একদিন লাঙল তৈরির পেশায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই কাজ আর শেখাবেন না। নতুন পেশা খুঁজে নেবেন তারা। তখন হাজার বছরের লাঙল-জোয়ালের স্থান হবে জাদুঘরে। মানুষের সভ্যতার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে চিরবিশ্রামে থাকবে এই লাঙল-জোয়াল। কৃষক আবু হানিফা বলেন, এক সময় লাঙল, জোয়াল, মই ও বলদ ছাড়া চাষাবাদ কল্পনা করা যেত না। কিন্তু যান্ত্রিকতার এ যুগে সব হারিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আগের মতো লাঙল দিয়ে চাষাবাদও করছে না মানুষ। গাবতলীর তেলকুপি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম হোসেন জানান, পর্যাপ্ত গো-চারণ ভূমি না থাকলে বাড়ীতে খামারের মাধ্যমে হালের বলদ পালন করা যাবেনা। এছাড়া বর্তমানে গরু-বাছুরের রোগ বালাই আগের তুলনায় বেশী হয়। বানিজ্যিকভাবে গরু পালন করা হয় তাইে বাজারে হালের বলদের দামও চড়া। এসবের কারণে এলাকার কৃষক লাঙল-জোয়ালের ব্যবহার কমে দিয়েছে। কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, এলাকার কিছু কিছু গৃহস্থের ঘরে আজও লাঙ্গল-জোয়াল ও হালের বলদ আছে। কারন যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় গৃহস্থের সব জমিতে পাওয়ারটিলার বা ট্রাকটর নেয়া সম্ভব হয় না। সেই সব জমিতে মান্দাতা আমলের লাঙল দিয়ে হালচাষ করতে হয়। কৃষিবিদদের মতে, লাঙল-জোয়াল বলদের কাঁধে বসিয়ে হালচাষ পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব। কারণ গরুর গোবর থেকে নির্ভেজাল জৈব সার পাওয়া যায়। এই সার জমির উর্বরা শক্তি ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে। তাই এই পদ্ধতি কৃষকের জন্য লাভজনক ও পরিবেশ সহায়ক ছিল। তবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে হালচাষের সময় কম লাগে। এছাড়া অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া এ পদ্ধতির হালচাষে কৃষক অনেকটাই ঝামেলামুক্ত বলে মনে করেন।