সমাজ সংশ্লিষ্ট সকলের মাদকের বিরুদ্ধে মানবিক ও দায়িত্বশীল ভুমিকা সকলের কাম্য
আমাদের সমাজের সামাজিক অস্থিরতা আশংঙ্কা জনক হারে বাড়ছে, তা অতি সামপ্রতিক সময়ের একটি ভয়ংকর বিষয় হয়ে আমাদের সামনে দাড়িয়েছে । বর্তমান আমাদের দেশে প্রধান ও অন্যতম সমস্যা মাদক। শহরের প্রান কেন্দ্র থেকে মূলত শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন মাদকের অবাধ বিচরন। অতি সাম্প্রতি সময়ে জাতীয় দেনিক পত্রিকা করতোয়া প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০১৭ তারিখের শিরোনামে আমরা দেখতে পারছি । নাটরে মাদকা শক্ত ছেলের হাতে মা খুন । নাটোর সদর উপজেলার তেলকূুপি গ্রামে মাদকাশক্ত ছেলের হাতে খুন হয়েছেন হাওয়া বিবি (৪৫) নামে এক নারী । ২৭ মার্চ সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে । নিহত হাওয়া বিবি ওই এলাকার মমতাজ হোসেনের স্ত্রী । নাটোর সদর থানার ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জনান, সকালে হাওয়া বিবি রান্না করছিল এসময় ছেলে শিমুল এসে তার কাছে টাকা চান । এনিয়ে মা ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় । একপর্যায়ে শিমুল ক্ষিপ্ত হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিড়ানী দিয়ে গলায় কোপ দেয় । এতে ঘটনাস্থলেই মা হাওয়া বিবির মৃত্য হয় । এসময় তাকে বাঁচাতে এলে হাওযা বিবির বাবা শুকুর খাঁ (৮০) আহত হন । তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ছে । ওসি আরও জনান এ ঘটনার পর এলাকাবাসী শিমুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে । তার বিরুদ্ধে বাবা মমতাজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা রুজু করেছেন। আমরা দেখতে পারছি ইউএসএআইডি ও ভয়েজ অফ আমেরিকা সহযোগীতায় তথ্য মতে বাংলাদেশে প্রকৃত মাদকাসক্তের সংখ্যা নিয়ে কোন নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাশক্ত ব্যাক্তির সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটি (৫০ লক্ষ) । এর মধ্যে অর্থাৎ ৪০ লক্ষই তরুন । ভৌগলিক কারনে বাংলাদে এ সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। মাদকাশক্তদের আশি ভাগই তরুন যুবক ও কিশোর সম্প্রদায় বলে জানা গেছে। ভারত সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় ফেন্সিডিল, হেরোইন, মদ, গাজা বিভিন্ন নেশা জাতীয় ইঞ্জেকশন পাওয়া খুব সহজ। প্রায় প্রতিদিন ভারত সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা ও জীবন নগর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথে এসব মাদক দ্রব্য ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ঢুকছে। তার পর রেলপথ ও সড়ক পথ দিয়ে পৌছে যাচ্ছে দেশের অভ্যান্তরে। অতি সহজেই হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর প্রানঘাতি নেশাদ্রব্য আমাদের যুব সমাজ। বর্তমান সময়ে অতি জনপ্রিয় নেশার আর্বিভাব ঘটেছে যার নাম ইয়াবা, অনেকে ছদ্দনাম হিসাবে বলে বাবা আমাদের দেশে। এই ইয়াবা কিশোর তরুন যুব সমপ্রদায় অতি আগ্রহের সঙ্গে গ্রহন করছে। “ুধনধ” শব্দটি দুটি থাই শব্দ “ুধৎ”ও “নধয” থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো ক্রেজি মেডিসিন বা উত্তেজক ঔষধ। উত্তেজক মাদক ইয়াবা যারা নিয়মিত ব্যবহার করে তাদের ফুসফুস, লিভার ও কিডনী নষ্ট হয়। র্দীর্ঘ দিন ইয়াবা ব্যাবহার করার ফলে স্পিডব্যাক অথবা ক্রাংব্যাক নামক হ্যালোসিনেশন তৈরি হয়। এত ব্যবহার কারীর মনে হয় যেন সারা শরীরে চামড়ার নিচ দিয়ে ছাড়পোকা কিলবিল করে নড়ে বেড়াচ্ছে এবং ব্যবহারকারী এদের টিপে বের করার জন্য মরিয়া হয়ে উন্মাদ আচরন করে থাকে। ইয়াবা ব্যবহার শেষে হাফ লাইফ পার হওয়ার পর রক্তপ্রবাহে এর ক্রিয়া হয়ে গেলে, কিংবা ব্যবহৃত মাত্রায় প্রয়োজনীয় ফলোদয় না হলে ব্যবহার কারীর মধ্যে চরম অবসাদ, হতাশা, বিশাদ ও নৈরাশ্য সৃষ্টি হয়। ব্যবহার কারী তখন যে কোন রকম অপ্রত্যাশিত আচরন করতে পারে। এ অবস্থায় মানুষ খুন করাও বিচিত্র কিছু নয়। তীব্র প্রত্যাহার জনিত প্রতিক্রিয়ার সময় ব্যবহার কারীর হতাশা ও নৈরাশা এত মারাত্বক হতে পারে যা তাকে আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। মাদকাশক্ত ব্যাক্তিকে আমরা বলতে পারি অসুস্থ ব্যক্তি। যেন কোন ব্যক্তি মাদকাশক্ত হয়ে অসুস্থ না হন সেদিকে সর্বপ্রথম তার পরিবারের ভ’মিকাটাই গুরুত্বপূর্ন। আমি মনে করি, একটি কিশোর বা কিশোরীর আচরনগত পরিবর্তন বা সে কার সাথে মেলামেশা করছে সেটি লক্ষরাখা পরিবারের বয়জেষ্ট্য সদস্যদের অতিজরুরী। এছাড়া আমাদের সমাজে প্রতিটি দায়িত্ববান নাগরিকদের পবিত্র দায়িত্ব নীরবতার সাংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে মাদকাশক্তি প্রতিরোধে সমন্বিত প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন।
লেখক ঃ সচেতন নাগরিক কর্মী,
সচেতন নাগরিক সমাজ, বগুড়া।