যুবলীগ নেতার সহযোগীতায় মৃত ব্যাক্তিকে জীবিত দেখিয়ে ৪০ বিঘা জমি আত্মসাতের অভিযোগ

বার্তা বিভাগবার্তা বিভাগ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:48 PM, 28 October 2020

বিশেষ প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এবার মৃত ব্যাক্তিকে ৪ বছর পরে জীবিত দেখিয়ে ৪০ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম আনছার প্রামানিক ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে। যার বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। আর এ কাজে তাকে সাহায্য করেছেন কুমারখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ হারুন অর রশীদ ও পৌরসভার প্রধান সহকারী রাজু আহাম্মেদ বিপ্লব।

কুমারখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ নূরুল ইসালম আনসার আলী প্রামানিক ও তার ৩ ভাই মিলে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে সোলেনামা করে দখল করেছেন এই জমি। অভিযুক্ত অন্য ৩ ভাই হলো শমসের আলী প্রামানিক,আব্দুল হাই প্রামানিক, আব্দুল ওহাব প্রামানিক বাবু।

অনুসন্ধানে জানা যায় কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের খয়েরচারা গ্রামের মৃত আঃ রহিম বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আব্দুর রশিদ মৃত্যু বরণ করেন ১৫-০৯-২০০৮ তারিখে খয়েরচারা গ্রামে নিজ বাড়িতে। সদকী ইউনিয়নের মৃত নিবন্ধনের ১ নং রেজিষ্টারের ১০৪ পাতায় ক্রমিক নং ১৩৮ এ যার তথ্য নিবন্ধিত রয়েছে। ৯/০৩/২০০৯ ইং তারিখে তদানিন্তন সদকী ইউপি চেয়ারম্যান লূৎফর রহমান স্বাক্ষর করে এই মৃত্যু সনদ প্রদান করেন।

এছাড়াও রশিদ অসচ্ছল হওয়ার কারনে বয়স্ক ভাতা পেতেন কুমারখালী সমাজসেবা কার্যালয় থেকে।তার মৃত্যুর পর তদানিন্তন সদকী ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি ২০০৮ সালে সমাজ সেবাকে অবহিত করেন এবং রশীদের পরিবর্তে আর একজনকে ভাতা প্রদানের জন্য সুপারিশ করেন। যা কুমারখালী সমাজসেবা কার্যালয়ে লিপিবদ্ধ আছে।

কিন্তু জমি আত্মসাৎ করতে ১-১২-২০১১ ইং তারিখে মৃত রশিদকে জীবিত দেখিয়ে আদালতে হাজির দেখায় আনসার প্রামানিক গং এবং একটি সোলেনামাতে নিরক্ষর এই মৃত ব্যাক্তির স্বাক্ষর দেখানো হয়। শুধু তাই নয় সোলেনামাতে আব্দুর রশীদ বাদে বাকী ৯ জনের যে স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে তাদের মধ্যে মশিয়ার এবং সামসুল ছিল নিরক্ষর আর বাদবাকী ৭ জন কোনমতো স্বাক্ষর করতে জানলেও তারা কেউ লেখাপড়া জানত না। তবে সোলেনামাতে প্রত্যেকের স্বাক্ষরই অত্যন্ত দক্ষ হাতের।

মৃত রশিদের ছেলে আনোয়ার হোসেন জানান কোর্টে সোলেনামা করার দিন স্বাক্ষর করা ব্যাক্তিরা কেউই উপস্থিত ছিল না। তিনি জানান তার পিতা ১৫-০৯-২০০৮ তারিখে খয়েরচারা গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান। তাহলে কিভাবে ১/১২/২০১১ তারিখে কোর্টে উপস্থিত থেকে সোলেনামা করলেন? টাকার বিনিময়ে সাবেক মেয়র আনসার প্রামানিক কুমারখালী পৌরসভার তদানিন্তন প্যানেল মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ হারুন আর রশীদ এবং পৌরসভার প্রধান সহকারী মোঃ রাজু আহম্মেদ বিপ্লব এর যোগসাজসে ১৯-১০-২০১৭ ইং তারিখে হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত একটি জাল মৃত্যু সনদ কুমারখালী পৌরসভা থেকে তৈরী করেছেন।

পৌরসভা থেকে তৈরী করা মৃত্যু সনদে আব্দুর রশীদের ঠিকানা দেখানো হয় পৌর এলাকার কুন্ডুপাড়ায় তার চাচাত ভাই আব্দুল মজিদ বিশ্বাসের বাড়িতে। পৌরসভার মৃত্যু রেজিষ্টারের ক্রমিক নং ৮৪, মৃত্যু রেজিষ্টারের পাতা নং ১৯৮ এবং রেজিষ্টরের বই নং ২০০৮-২০১২ এর তথ্য মতে ১৮-১১-২০১২ ইং তারিখে আব্দুর রশীদ মারা যায় বলে দেখানো হয়। আব্দুল মজিদের স্ত্রী আলেয়া বেগম জনান তার দেবর আব্দুর রশীদ ২০০৮ সালে মারা যান কিন্তু কিভাবে ভূয়া করে ২০১১ সালে আমার বাড়িতে তার মৃত্যু দেখাল এটা আমার মাথায় আসেনা।

এ বিষয়ে বর্তমান সদকী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মজিদ জানান, ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর খয়েরচারা গ্রামের আব্দুর রশিদ বিশ্বাস পিতা মৃত আব্দুর রহিম বিশ্বাস মৃত্যু বরন করলে ইউনিয়ন থেকে তার মৃত্যু সনদ দেয়া হয়। সেটি ১ নং রেজিস্ট্রারের ১০৪ পাতার ১৩৮ ক্রমিক নম্বরে লিপিবদ্ধ আছে। অন্যদিকে কুমারখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান আব্দুর রশিদের নামে বয়স্কভাতা চলমান ছিলো ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবরে তিনি মারা যাবার পর বয়স্কভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়।

এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে আনসার আলী প্রামানিক টেলিফোনে বলেন এইসব অভিযোগ ভিত্তিহীন আমরা বিগত ৭০ বছর ধরে এই জমি ভোগ দখল করে আসছি। উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর হারুন বলেন কুমারখালী পৌরসভার মৃত্যু রেজিষ্টারে ২০১২ সালে আব্দুর রশিদের মৃত্যু হয়েছে বলে লিপিবদ্ধ আছে। রেজিষ্টারে আছে বলে আমি সনদ প্রদান করেছি। তিনি আরও বলেন ২০১২ সালের মৃত্যু সনদের পক্ষে তিনি কোর্টে সাক্ষীও দিয়েছেন।

অন্যদিকে পৌরসভার প্রধান সহকারী আনসার প্রামানিকের শ্যালক মোঃ রাজু আহম্মেদ বলেন এতে তিনি জড়িত নন তদানিন্তন প্যানেল মেয়র হারুন কমিশনার সব জানে। এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে বর্তমান পৌর মেয়র মোঃ সামসুজ্জামান অরুন বলেন সে সময় তিনি মন্ত্রনালয় থেকে ছুটি নিয়ে ভারতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তখন প্যানেল মেয়র হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন হারুন কমিশনার। এই বিষয়ে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন বলে জানান এবং তদন্তে কেউ দোষী প্রমানীত হলে তার বিরুদ্ধে পৌর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং এই মৃত্যু সনদ বাতিল করা হবে। তিনি আরও বলেন পৌর আইন অনুযায়ি জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ এবং ওয়ারিশ সনদ শুধুমাত্র মেয়র প্রদান করতে পারে, প্যানেল মেয়র এই সনদ দিতে পারে না।

 

আপনার মতামত লিখুন :