শিবগঞ্জে সুদ ব্যাবসায়ীদের রশানলে পড়ে নিংশ্ব হচ্ছে সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো

SangbadAjKalSangbadAjKal
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:43 PM, 12 June 2019

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার অনেক এলাকায় রমরমা ভাবে চলছে সুদের ব্যবসা। মানুষকে নিঃস্ব করে পথে বসানোর অন্যতম উপায় সুদের ব্যবসা। আর এখন সুদ মানুষকে নিঃস্ব করার মরণ ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এ ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে উপজেলার শহর থেকে গ্রাম-গ্রামান্তরে। ফলে সুদ ব্যবসায়ীদের রশানলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অথচ এসব দেখার কেউ নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার শহর এলাকা সহ ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ক্লাব নামে একচেটিয়া ভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে কিছু সুদ ব্যবসায়ী নামক রক্তচোষা লোক। এসব লোকদের বাহির থেকে যতই সুন্দর দেখা যাক না কেন, ভিতরটা এতটাই কুৎসিত যা বলে শেষ করা যাবে না। ইসলাম ধর্মে ঘোর বিরোধীতা করা হয়েছে অবৈধ সুদখোরদের বিরুদ্ধে। এই সুদের ব্যবসা এমন এক পর্যায়ে গিয়েছে যে, হজ্জ্ব করে এসে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েও সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সবার আড়ালে এমনকি মসজিদে নামায পড়তে গেলেও এই সুদখোর লোকজনকে নামাযের প্রথম কাতারে বসে নামায পড়তে দেখা যায়। আর এই সুদ শুধু ব্যক্তিগত ভাবে নয়, উপজেলার শহর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় অবৈধ সঞ্চয় সমিতির নামে চলছে একচেটিয়া সুদের ব্যবসা। এখানে লাভবান হচ্ছে কিছু অসাধু লোকজন, যারা এই সঞ্চয় সমিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন।
আর্থিক প্রয়োজনের বেকায়দায় পড়ে ওইসব সুদ ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ছে মধ্যবিত্ত পরিবার, কৃষক, বর্গা চাষী, স্বল্প আয়ের লোকজন সহ স্কুল, মাদ্রাসা, বেসরকারি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। তারা এই কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করতে গিয়ে বিপদে পড়ে বাধ্য হয়ে ঐ সব সুদ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ১৫০-৩০০ টাকা ননজুডিশিয়াল সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর বা টিপ দিয়ে এমনকি ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে টাকা নিতে হয়। আর এই সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষী নেওয়া হয় সুদ ব্যবসায়ীদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের এবং ইচ্ছে মতো সাদা ষ্ট্যাম্প পূরণ করে রাখেন কিংবা প্রয়োজন মতো লেখার জন্য ষ্ট্যাম্প ফাঁকা রাখেন। আর বেকায়দায় পড়া ব্যক্তিদের সুদ ব্যবসায়ীদের চাপে জমির দলিল পত্রাদি, স্বর্ণালংকার, চাকরিজীবিদের মাসিক বেতনের চেকও বন্ধক রাখতে বাধ্য হচ্ছে সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে। দৈনিক, সাপ্তাহিক এমনকি মাসিক ভিত্তিতে নগদ ঋণ দিয়ে দেড় থেকে দুই গুণ মুনাফা আদায় করে সুদ ব্যবসায়ীরা। সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচার ও লাঞ্চনার নজিরও রয়েছে অনেক। সম্প্রতি বগুড়া শহরের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় খুলিলুর রহমান (৫৫)নামের এক দরিদ্র কৃষককে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে অপরদিকে শেরপুর উপজেলার খানপুর এলাকায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে চৈতন্য চন্দ্র ব্যাপারীর ছেলে নিতাই চন্দ্র ব্যাপারী গভীর রাতে তার নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
একদিকে যেমন সুদ ব্যবসায়ীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে, অন্যদিকে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ দিনদিন গরীব ও ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে। অথচ সুদ ব্যবসায়ীদের এমন কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও নেই কোন পদক্ষেপ। সঠিক আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা না থাকার কারণে ঋণের নামে এসব শোষণ বেড়েই চলছে। সুদ ব্যবসায়ীদের সার্বিক এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অন্যথায় আত্মহত্যা সহ মারামারি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ সহ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

আপনার মতামত লিখুন :