আগামী বৃহস্পতিবার ২৯বৈশাক, ১২মে বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানে শেষ বৈশাখী মেলা ঐদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামবে এখানে

SangbadAjKalSangbadAjKal
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:55 PM, 05 May 2016

 

আব্দুল বারী মহাস্থান (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ অত্যাচারী বাদশা পশুরাম আর পীর কামেল মহান অলি হযরত শাহ্ সুলতান মাহমুদ বলকী (র:) কে ঘিরে সুখ-দুঃখ আনন্দ আর বেদনার ইতিহাসকে স্মরন করে প্রতি বৎসর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পিবার বগুড়া জেলার ঐতিহাসিক মহাস্থানে বিনা প্রচারনায়, বিনা দাওয়াতে একদিন এক রাতের জন্য জ্বিন পরী আর ইনছানদের বিশাল এক মিলন মেলায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। জানা যায়,আগামী ২৯শে বৈশিাখ, ১২মে বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক মহাস্থানে বৈশাখী মেলা। হযরত শাহ সুলতান ও পশুরাম এর ইতিহাসকে ঘিরে প্রতি বৎসর বৈশাখী মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এই মেলাটি উদ্যাপিত হয়ে থাকে। পুঞ্জিকা ও ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হবে ২৯বৈশাখ, ১২মে। ইতি মধ্যে জটাধারী বাউল ফকির সন্ন্যাসীরা মহাস্থানে আগমন শুরু করেছে । মেলার দিনটিতে এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে আর রাতে জ্বিন পরী আর ইনছানদের মধ্যে একাকার হয়ে যায় । বিনা দাওয়াতে এতো সমাগম বাংলাদেশের ইতিহাসে বগুড়ার মহাস্থানই তার জলন্ত প্রমাণ। বিভিন্ন ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার মহাস্থান গড়ের ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের আধিক প্রাচীন । এই সুদীর্ঘ সময়ে মহাস্থানে শৃঙ্গ, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজবংশের কেন্দ্রীয় ও প্রদেশীক রাজধানী ছিল । এই প্রচীন নগরের ইতিহাস বিভন্ন ধর্মের বিভিন্ন বর্ণের বিভিন্ন জাতীর ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতা- স্ংস্কৃতি তাদের উত্থান-পতন এবং হাসি-কান্নার ইতিহাস। এই ঐতিহাসিক মহাস্থান গড় বাংলাদেশের সর্ব প্রাচীর ও সর্ব বৃহৎ নগর পুন্ডু নগরের ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। বগুড়া শহর থেকে ১৩ কি: মি: উত্তরে ঢাকা-দিনাজপুর মহাসরকের পার্শ্বে ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়। বিখ্যাত এই জায়গার নাম আজ থেকে ৩৩১ বৎসর আগে একটি সনদে পাওয়া গেছে। আবার কখনো এই মহাস্থান গড় নামের উৎপত্তি ফকির স¤প্রদায়ের দলপতি

মজনু শাহ মস্তানা বুরহান নামের সাথে জড়িত বলেও জানা যায় । মজনু শাহ মস্তানা ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ হতে ২৪ বছর পর্যন্ত মহাস্থানকে তার কার্যকলাপের প্রধান কেন্দ্ররুপে ব্যবহার করেন । মানব সভ্যতার ইতিহাসে পুন্ডুবর্ধন একটি প্রচীন নাম। প্রাচীন কালে পুন্ডুবর্ধন নগরটি কোন রাজা কর্তৃক বা কখনো প্রতিষ্ঠিত হয় তার সঠিক ইতিহাস আজো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে পাঠকদের খুব সহজে দৈনিক উত্তর কোন বোঝাতে চাইতেছেন,প্রাচীনতম সময়ে মহাস্থান ও এ আশপাশের এলাকা শাসন করতেন রাজা পশুরাম। রাজাপশু রাম ছিলেন ভয়ানক এক অত্যাচারী রাজা। তিনি তার হিন্দু রাজ্যের শাসক হয়েও তার প্রজাদের উপর চালাতেন নির্যাতন। পশুরামের অত্যাচারে প্রজারা ছিল অতিষ্ট। পশুরামের রাজ্যে এক মাত্র মুসলমান ছিলেন হযরত বোরহান উদ্দীন কিন্তু তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। বোরহান উদ্দীন সৃষ্টি কর্তার কাছে মানত করেন তার একটা সন্তান হলে একটি গরু কোরবানী দেবেন। সৃষ্টি কর্তা তার আরজি কবুল করে নেন এবং হযরত বোরহানের ঘরে আসে একটা পুত্র সন্তান। এরপর তিনি একটি গরু কুরবাণী দেন। এই কুরবানীর এক টুকরো মাংশ চীল ঠোঁটে করে নিয়ে ফেলে দেন পশুরামের দরবারে। পশুরামের জানতে পেরে বোরহানের পরিবারকে রাজ প্রাশাদে ডেকেএনে বোরহান এর দুই হাত কেটে দেন এবং স্বামী স্ত্রীর সামনেই তার নবজাতক সন্তানকে হত্যা করে। এর পর বোরহান উদ্দীন তার ছিন্নহাত দুখানা উপরে তুলে চিৎকার করে উঠলেন এবং বলেলেন হে খোদা রাজার রাজা, বিচারকের বিচারক, আমি তোমার কাছে এর বিচার চাই খোদা এর বিচার তুমি করো। তিনি আর বলতে পারলেন না। বোরহান উদ্দীনের সংজ্ঞাহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। এই ঘটনার পর হযরত মাহ সুলতান বলখী (র:) তার রূহানী শক্তির বলে সমস্ত ঘটনা জানাতে পেরে বগুড়ার মহাস্তানের উদ্দেশ্যে মাছের পিঠে চরে বিশাল সমুদ্র পারি দিয়েমহাস্থানে আসেন। স্বয়ং সৃষ্টি কর্তাই, রূহানী শক্তির বলে অত্যাচারী পশুরামের বিশাল বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে সব অত্যাচারীকে খতম করে দিয়ে এই এলাকায় সকল ধর্মের নিরিহ মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দেন মহান অলি হযরত শাহসুলতান মাহমুদ বলখী (র:)। সমস্ত প্রকারের পাপাচার ও কুসংস্কারের অন্ধকার অতিক্রম করে এক আলোকময় পথের সন্দান দিয়ে মহাস্থানের মাটিতে মৃত্যু বরণ করেণ মহান অলি হযরত শহ সুলতান। শান্তির এই বিজয়কে স্মরণে প্রতি বৎসরের শেষ বৃহস্পতিবার এখানে বৈশাখী মেলা উদযাপন করেন মানুষ। দূর দূরান্ত থেকে সকল ধর্মের মানুষ ছুটে আসে বগুড়ার মহাস্থানে। লাখ লাখ ইনছানদের সাথে যোগ হয়ে যায় জীন পরীরাও। ইতি মধ্যে সাধু সন্ন্যাসীরা মহাস্থানে তাদের আস্তানা গেরে বসতে শুরু করেছেন। বাউল ফকির দরবেশ আর সন্ন্যাসীরা সারা দিন রাত মারুফতি জারী সারিগানে মগ্ন থাকবে, অন্যদিকে মুসলিরা সারারাত জেগে ইবাদত বন্দেগি করবেন। ২৯বৈশাখ, ১২মে, বৃহস্পতিবার দিন এবং রাতের অপেক্ষায় আছেন লক্ষ লক্ষ জীন, পরী, ইনছান। এই সেই বগুড়ার মহাস্থান।

আপনার মতামত লিখুন :