কালের আবর্তেই হারিয়ে গেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গী ‘হুক্কা’
মোঃ রবিউল আউয়াল, বালিয়াডাঙ্গি প্রতিনিধি ।। আবহমান কাল থেকেই গ্রাম বাংলার মানুষের ধূমপানের অন্যতম মাধ্যম ছিল হুক্কা। ধূমপানের জনপ্রিয় এই মাধ্যম গ্রাম বাংলার বিনোদন, আতিথিয়তা, বন্ধুত্ব, সম্প্রীতির প্রতীক। আজ থেকে এক দুই দশক আগেও গ্রামে গঞ্জে ধুমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে তামাকপানের নেশায় অভ্যস্থ ছিল। সে সময় ধনী-গরীব প্রতিটি বাড়িতেই ছিল হুক্কার প্রচলন। পুরুষের পাশাপাশি বয়স্ক নারী এবং ছেলে মেয়েরাও হুক্কার মাধ্যমে ধূমপান করতো। অনেকে শখের বশেও হুক্কায় দিত আয়েশি টান।বালিয়াডাঙ্গিতে এর প্রচলন ব্যাপক ছিল । কিন্তু আজও বিলুপ্তির দিকে।
এছাড়া এক সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে ‘হুক্কা’ খুবই জনপ্রিয় ছিল।এখন সবই অতীত। কালে কালে বদলায় সমাজ, সংস্কৃতি, হারায় ঐতিহ্য।
তেমনি আজ কালের আবর্তেই হারিয়ে গেছে সেই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের ‘হুক্কা’। এলাকার কয়েকজন প্রবীণের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, আমরা দেখেছি গ্রামের বিভিন্ন বৈঠকখানায় মেহমানদের জন্য প্রধান আকর্ষন ছিল হুক্কা। যে কোনো বয়সের ছেলে ও বয়স্করা হুক্কার নেশায় মাতোয়ারা ছিল। কিন্তু আজ আর কেউ এর নাম পর্যন্ত জানেনা। তামাক পাতাগুলোকে টুকরো টুকরো করে কেটে এতে চিটাগুড় মিশ্রিত করে তৈরি হত হুক্কার প্রধান উপাদান ‘তামুক’। তামুক মাটির তৈরি কলসি’র মধ্যে দিয়ে কয়লা দ্বারা ‘টিক্কা’র মাধ্যমে আগুন দিয়ে ধূমপান করা হতো। হুক্কা নিয়ে গ্রাম বাংলায় একটি জনপ্রিয় লোকগান প্রচলিত ছিল। প্রাণের হুক্কারে/ তোর নাম কে রাখিলো ডাবা,/ হুক্কা আমার নাতিপুতি/ হুক্কা আমার বাবা। কালের পরিক্রমায় গ্রামে গ্রামে হুক্কায় তামাকপানের যে প্রচলন ছিল তা আর চোখেই পরেনা।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হুক্কায় ধূমপান করা দূরে থাক চোখেই দেখেনি হুক্কা। হুক্কার জায়গা দখল করে নিয়েছে বিড়ি, সিগারেট, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। যার মধ্যে রয়েছে মারাত্মক ক্ষতিকর নিকোটিন। তার পরেও এই মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়েছে যুব সমাজ। যাদের নিয়ে দেশের সব অভিভাবকমহল থাকেন সব সময় উদ্বিগ্ন। এক কালের গ্রাম বাংলার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ‘হুক্কা’ আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামের কয়েকজন বয়স্ক মানুষের সাথে কথা বলে আরও জানা যায় যে,হুক্কা আজ আর নেই। আজ আছে শুধু নেশা জাতিয় কিছু পণ্য।