বগুড়ায় পানির দরে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি, গরিবের হক ‘লুট’
সংবাদদাতাঃ বগুড়ায় সোমবার কোরবানির পশুর চামড়া পানির দরে বিক্রি হয়েছে। গরুর চামড়া ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা দরে। এরপরও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নিজের পুঁজি দিয়ে চামড়া কিনে তা বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘদিন পর চামড়ার এ দর পতনকে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে গরিবের হক লুট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা প্রতিবছরের মত এবারও এলাকা ভাগ করে চামড়া কিনতে আসেন। তারা মাপভেদে গরুর চামড়া ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় এবং ছাগলের চামড়া ৫ টাকা থেকে ২০ টাকায় কেনেন। অধিকাংশ কোরবানিদাতা দ্বিতীয় ক্রেতা এলাকায় না আসায় বাধ্য হয়েই কমমূল্যে চামড়া বিক্রি করেন। কেউ কেউ রাগ করে ব্যবসায়ীদের চামড়া না দিয়ে এতিমখানায় পৌঁছে দিয়েছেন। ২-৩ বছর আগেও গরিবের হক চামড়ার বাজার চড়া ছিল। তখন শুধু গরুর মাথার চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ টাকায়। গত কয়েক বছর লোকসান হওয়ায় এবার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সতর্কতার সঙ্গে চামড়া কেনেন। শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার শাহাদত ইসলাম তূর্য্য নামে এক অটোরিকশা চালক জানান, তারা চার ভাগে প্রায় ৫২ হাজার টাকায় একটি গরু কোরবানি দেন। ওই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৩০০ টাকায়। প্রতিবেশি রতন শেখ তার ৫৪ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া একই দামে বিক্রি করেছেন। একটু ছোট গরু হলে দাম ১০০ টাকা এবং বড় হলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দেয়া হয়। সদরের সাবগ্রাম এলাকার আকাশ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তারা এবার ৫ ভাগে লাখ টাকা মূল্যের গরু কোরবানি দেন। কিন্তু তার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫০০ টাকা। অথচ অন্তত ২০ জন দরিদ্র মানুষ তার কাছে মালের (চামড়া) টাকা চেয়েছেন। সোমবার দুপুরের পর শহরের বাদুড়তলা থেকে চকসুত্রাপুর পর্যন্ত চামড়ার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রচুর চামড়া কেনাবেচা চলছে। নিম্ন দরে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় বিক্রেতাদের মুখে হাসি নেই। শুধু শহর নয়, বিভিন্ন উপজেলা থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ভটভটিসহ বিভিন্ন যানবাহনে চামড়া এনেছেন। ব্যবসায়ীরা ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা মূল্য দিচ্ছেন। গাবতলী উপজেলার মারিয়া গ্রামের চামড়া ব্যবসায়ী মন্টু মিয়া জানান, গত কয়েক বছর চামড়া ব্যবসা করে মহাজনের কাছে ২৮ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। তাই এবার সতর্কতার সঙ্গে চামড়া কিনেছেন। তিনি গরুর চামড়া ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে কিনেছেন। একই উপজেলার গুড়টোপ গ্রামের আজিজার রহমান ও মজিদ মাস্টার জানান, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রামে ৭টি গরু, ২৪টি ছাগল ও ৩টি ভেড়ার চামড়ার দাম বলেছেন তিন হাজার টাকা। তাই তিনি অধিক মূল্যের আশায় ভ্যানে চামড়াগুলো শহরে বিক্রি করতে এসেছেন। এখানে এসেও একই দাম পেয়ে হতাশ হয়েছেন। শহরের চামড়ার আড়তগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার টেনারি মালিকদের কাছে লাখ লাখ টাকা পাওনা বকেয়া রয়েছে। এ কারণে তারাও এবার বাকিতে চামড়া সরবরাহ করবেন না। প্রয়োজনে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রাখবেন। এ কারণে তারাও ছোট ব্যবসায়ীদের অধিক দামে চামড়া না কেনার পরামর্শ দেন। এদিকে চামড়ার দাম কম হওয়ায় কোরবানিদাতারা হতাশ হন। তারা মন্তব্য করেন, মাত্র কয়েক বছর আগে একটি গরুর চামড়া দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারে এবং ছাগলের চামড়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পশুর মূল্য অনেক বেড়ে গেলেও চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। এতে বিভিন্ন মাদ্রাসার এতিম শিশুদের হক নষ্ট করা হয়েছে। তারা এ জন্য চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, গরিবের হক নষ্ট করে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য শ্যামল বর্মণ জানান, সিন্ডিকেট সরকার নির্ধারিত দরের তোয়াক্কা না করে নামমাত্র দরে চামড়া বিক্রি করতে জনগণকে বাধ্য করেছে। এদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আগামী ১৩ আগস্ট সকালে শহরের সাতমাথায় মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।