বিশ্বজুড়ে সমাজতান্ত্রিক সম্প্রদায় মানুষের মহানায়কের চির বিদায়
জন্ম ১৯২৬ ইং ১৩ ই আগষ্ট মৃত্যু ২৬ শে নভেম্বর ২০১৬
১৯২৬ সালের ১৩ই আগষ্ট কিউবার পূর্বা আঞ্চলে ওরিয়ান্তে প্রদেশে বিরান শহরের কাছে ফিদেল আলেজান্দো কাস্তো রুশ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন চিনি কলের মালিক। প্রাইভেট জেসুইট বোর্ডিং স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন কাস্তো। হাবানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন øাতক করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেন। হাবানা ল স্কুলে পড়ার সময় তিনি জড়িয়ে পরেন ছাত্র আন্দোলনে। এখান থেকেই তিনি রাজনীতির পথে হাটতে থাকেন। স্বচ্ছন পরিবারের ছেলে হিসাবে আইনজীবী হয়ে সহজ সরল দিন কাটানো তার জন্য কঠিন ছিলনা। কিউবান জাতীয় বোধ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা ও সমাজতন্ত্রের প্রতি পক্ষপাত তাকে রাজনীতিতে স্বক্রীয় করে তোলে। ১৯৪৭ সালে ডমিকিনিকান রিপাবলিকে তখনকার রাফয়েল এজিলোকে উৎখাতে এ বিদ্রোহের অংশ নেন ফিদেল। তাতে ব্যার্থ হলেও দমে যাননি তিনি। পরের বছর চলে যান কলম্বিয়ার বোপোতায়া সেখানে তাকে দেখা যায় সরকার বিরোধী দাঙ্গায়। একই বছর কাস্তে যোগদেন সংস্কারপন্থী পার্টিদো অঙ্গোদক্রোতে (অর্থোডক্স পার্টি) কমিউনিষ্ট বিরোধী ঐ দলের প্রার্থী ক্রয়েনর্দো তিনি ১৯৪৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও ফিদেল তাকে পুনরায় নির্বাচন করতে প্রেরণা যোগান। ১৯৫২ সালে জেনালে বাতিস্তা নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে পরবর্তী নির্বাচন বাতিল ঘোষনা করলে কাস্তেও তার দলের কয়েক সদস্য মার্কিন মতপুষ্ট স্বৈরশাসন ঘটাতে অভ্যুস্থানের পরিকল্পনা করেন। ওই অভ্যুস্থান ব্যার্থ হলে বাতিস্তা সরকার কাস্তোকে বন্ধী করেন। এরপর এক প্রহসনের বিচার তাকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। দুই এক চুক্তির বলে মুক্তি পেয়ে সহযোগীদের নিয়ে মেক্সিকোয় পাড়ি জমান ফিদেল। সেখানেই দেখা হয় চে গেভারের সঙ্গে। চে, ফিদেল ওজুয়ান ও তার ভাই রাউল পরিকল্পনা করেন কিউবায় ফিরে গিয়ে বাতিস্তা সরকার উৎখাত করবেন সেখানে একটি গেরিলা দল গঠন এবং পর্যাপ্ত অস্ত্র শস্ত্র জোগারের পর চে, গুয়েভার ভারা, ভাই রাউল কাস্তো, জুয়ান আল মাইরা এবং অন্যদের মিলিয়ে প্রায় ৮০ জনের একটি বিপ্লবী দল ১৯৫৬ সালে কিউবায় ফিরে আসেন। গ্রানবা নামের একটি ছোট নৌকায় করে ফিদেলের বিপ্লবী দল কিউবায় এসে ভেরে। জনগনের তুমুল সমর্থন নিয়ে ১৯৫৮ সালের শেষ দিকে ফিদেল বাহিনী একের পর এক শহর সরকার বাহিনীর কাছে থেকে দখল করতে থাকে। ১৯৫৯ সালের ১ল জানুয়ারী নববর্ষের দিনে কিউবা ছেড়ে পালান জেনারেল বাতিস্ত। কিউবান বিপ্লবের জীবন্ত আইকন এখন ইতিহাস হয়ে গেলেন। পালিয়ে আশ্রয় নেয় ডমিনিকান রিপাবলিককে। ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র পন্থী সরকারের পতন ঘটিয়ে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আহরহন করেন তিনি। কমিনিউসম প্রতিষ্ঠার পর মার্কিন সরকার তাকে শয়তান ও অত্যাচারী বলে আখ্যায়িত করে ও মার্কিন আখ্যাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসরন করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু মার্কিন সরকারের নাকের ডগায় সফলভাবে দেশকে নেতৃত্ব দেন তিনি। এর ফল শ্র“তিতে মার্কিন সরকার ৬৩০ বার হত্যা চেষ্টা করেছিলেন ফিদের কাস্তোকে। কিন্তু প্রতিবারই ঘাতকদের চেষ্টা ব্যার্থ হয়। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জোট বহিভূত দেশগুলো এক বৈঠকের পর কাস্তো এ কথা বলেছিলেন আমি হিমালয় দেখিনি। কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় এই মানুষই হিমালয়। তাই আমার হিমালয় দেখা হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কের এই কথা বাংলাদেশের মানুষ আজীবন মনে রাখবে। সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাবে কিউবার সাবেক এই নেতার প্রতি। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অসামান্য ভূমিকা ছিল কিউবার এই নেতার। জাতির জনকের কন্যা ও বাংলাদেশেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা কাস্তোকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভুষিত করেছেন ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধ মৈত্রী সম্মননা প্রদান করা হয় কাস্তোকে। অনেকে মনে করছেন ফিদেল কাস্তোর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের সংকটের মুখোমুখি পরবে। কিন্তু আমার মনে হয় ফিদেল কাস্তের ১৯৮৯ সালে তার কথাটি “শুধু কল্পনা করেন, বিশ্বে কি ঘটবে যদি সমাজতান্ত্রিক সম্প্রদায় অদৃশ্য হয়ে যায়….. আগে সম্ভব হলেও এখন তা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করি না।” লেখক ও কলামিষ্ট
মীর রাকিব হাসান