“খাবারে বিষ” একটি আতঙ্কের নাম, অনিরাপদ খাদ্য আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে

SangbadAjKalSangbadAjKal
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:03 AM, 29 October 2019

মো: জাহিদুল ইসলাম জাহিদ সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি: মানুষ জন্ম গ্রহণের সাথে সাথে প্রয়োজন হয় খাদ্যের। খাদ্যের অধিকার নিয়েই প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে আসে। আর এই অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা সামনে রেখে তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।

তার পরেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেজ্ঞরা বলেছেন সুস্থ্য থাকার জন্য শুধু খাদ্যের নয় “নিরাপদ খাদ্যের” প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের কারণে অধিকাংশ মানুষ নিজের অজান্তেই অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতি বছর মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এছাড়া ৫ বছরে চেয়ে কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবার জনিত রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু। জানা গেছে ১৯৯৪ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই স্যালমোনেলা জীবাণু বহনকারী আইসক্রিম খাওয়ার ফলে ২ লাখ ২৪ হাজার মানুষ রোগে আক্রান্ত হয়। ১৯৮৮ সালে দুষিত শামুক ও গলদা চিংড়ি খেয়ে চীনে প্রায় ৩ লাখ মানুষ রোগাক্রান্ত হয়। ২০০৮ সালে চীনে তৈরী কয়েকটি কম্পানির গুড়ো দুধ পান করে বহু শিশু আক্রান্ত হয়। ওই দুধে মেলামেইনের মাত্রা বেশী ছিল। বাংলাদেশেও ওই দুধ আমদানির মাধ্যমে আসে। সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে সরকার ওই দুধ সহ উন্নত দেশের কয়েকটি ব্র্যান্ডের দুধ আমদানি নিষিদ্ধ করে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভূমিকা রেখে চলেছে । তবে ভূমিকা ও গুরুত্ব আরো বাড়াতে হবে। ১৬ কোটির জন বহুল বাংলাদেশে “খাবারে বিষ” একটি আতঙ্কের নাম। এই বিশাল জন গৌষ্ঠির খাদ্য চাহিদা মেটাতে ফসল উৎপাদনে পোকা দমনে যত্রতত্র ভাবে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েই চলছে।

কোন নিময় না মেনে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ যেমন বেড়েছে তেমনি তার স্বাস্ব্য ঝুঁকির সাথে সাথে ফসল অনিরাপদ করে তুলছে। ফলে মানুষ নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ভেজাল খাদ্য, বিষাক্ত খাদ্য, রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো খাদ্যে বাংলাদেশ সয়লাব হয়ে গেছে। ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত ফল, শাকসবজি, খাদ্য শস্য, মাছ মাংস, ডিম, দুধ সহ সব খাদ্যই এখন অশঙ্কার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। মানুষ এখন সংঙ্কা মুক্ত হয়ে কোন খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। দেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে। নতুন নতুন ধানের জাত এসেছে। উচ্চ ফলনশীল এসব ধান দেশে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অধিক ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে আমরা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছি। ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবটরির গবেষনায় যে তথ্য বেড়িয়ে এসেছে তা ইতিমত ভয়াবাহ । গবেষনার জন্য চালের ২৩২টি নমুনা সংরক্ষন করা হয়েছিল। কোন কোন নমুনাতে একের অধিক দুষিত দ্রব্য পাওয়া যায়। তাই হিসাবটি হলো ১৩১টিতে পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন
মাত্রার ক্রোমিয়াম, ৩৩০টিতে ক্যাডমিয়াম ও সিসা। ৮৩টিতে আর্সেনিকের অস্তিত্ব। লক্ষ্য করা গেছে ফল, শাক সবজি, খাদ্য শস্য, গ্রæত বৃদ্ধি, পাকানো আর্কষনীয় করা, সংরক্ষণ, রোগ ও পোকা দমনের জন্য অসাধু ব্যবসায়ী ও অসতেচন কৃষকরা রাসায়নিক পদার্থ হরমোন ব্যবহার করে থাকে। প্রয়োগ বিধি না মেনে মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ফসল, পানি ও জমি মারাত্বক ভাবে বিষাক্ত হয়ে থাকে। এর যে কোন মাধ্যম থেকে মানুষের শরীরে ঢুকে
পড়ছে এর বিষাক্ত উপাদান। যা মানুষের জীবনকে বীপন্ন করে তুলছে। নানা প্রকার জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

খাদ্য অনিরাপদ শুধু কৃষক পর্যায়ে হচ্ছে না, অসাধু ব্যবসায়ী এবং অসচেতন ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্য অনিরাপদ হওয়ার কারণে জনগন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। খাদ্য উৎপাদন সঠিক ভাবে করতে না পারায় নিরাপদ খাদ্য আমরা পাচ্ছি না। নিরাপদ খাদ্যের অভাবে জাতির মেধা ধ্বংস হচ্ছে। আমাদের জন্য এখন অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িছে “নিরাপদ খাদ্য”। ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয় করার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। তারপরেও মানুষ নিরাপদ খাদ্য পাচ্ছে না। তাই আইনের সঠিক প্রয়োগ বাস্তবায়ন অতিব জরুরী। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন তৈরী করেন সরকার। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রæয়ারী থেকে আইনটি কার্যকর হয়। এই আইনের আওতায় ২ ফেব্রæয়ারী গঠন করা হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে ওই কর্তৃপক্ষ। একজন ভোক্তা ও ক্রেতা হিসাবে আমরা প্রথমে খাদ্যকে নিরাপদ পেতে চাই। তাই ভোক্তা ও ক্রেতা সাধারণের পক্ষ থেকে দাবি সব ক্ষেত্রেই আইন কঠিন ভাবে প্রয়োগ করা হোক এবং আইন অমান্যকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। ভেজাল ও মানহীন খাদ্য সরবরাহ ও বিক্রয় করে কেউ যেন পার না পায়। শাস্তিটা লোক দেখানো উদাহরন হলে হবে না। প্রতিটি ক্ষেত্রে আইন ভঙ্গকারীকে বিচারের আওতায় আনতে পারলেই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। চাষাবাদ থেকে খাবার গ্রহণ পর্যন্ত খাদ্য নিরাপদ হওয়া জরুরী।

আপনার মতামত লিখুন :