রাসুলের (সাঃ) ভিবিষ্যৎ বানীতে “করোনার” কারন

করোনা ভাইরাস” নামটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ করোনা থেকে যার অর্থ “মুকুট” বা “হার”। করোনা শব্দটি নিজে গ্রিক κορώνη korṓnē থেকে এসেছে যার অর্থ “মালা” বা “হার”।
১৯৬০ সালে ভাইরাসটি প্রথম আবিষ্কৃত হলেও তা পাওয়া যায় হাস, মুরগি সহ অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে। অতপর বিভিন্ন নামে ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে আক্রান্ত হলে, সর্বশেষ ব্যাপক আকারে Covid19 নামে তা প্রকাশ পায়। বিজ্ঞান বলছে, এটি এমন এক মহামারী যা আগে কখনোই হয় নি কিংবা এ সংক্রান্ত ধারনা নাই। যে জন্য করে আজও যার কোনো টিকা কিংবা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয় নি।
এবার আমরা সেই বিষয়টিই আলোচনা করব, যা স্বয়ং রাসুল সাঃ প্রায় দেরহাজার বছর পূর্বে সতর্ক করে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মনুষ্যজাতি সে ভাবে সতর্ক হতে পারে নি। বরং সেই কাজ গুলিই কেবল বৃদ্ধি পেয়েছে, যা করতে আল্লাহ এবং রাসুল সাঃ নিষেধ করেছিলেন, সতর্ক করেছিলেন এবং সুনিদৃষ্ট ভাবে যে কাজটি করলে এরকম পূর্ব অভিজ্ঞাতাহীন মহামারী এসে চেপে বসবে।
কী সেই কাজ? আসুন জেনে নেই নিম্নক্ত হাদিস থেকে-
بَاب الْعُقُوبَاتِ حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبُو أَيُّوبَ، عَنِ ابْنِ أَبِي مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ “ يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ . وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ ” .
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও।
(০১) যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।
(০২) যখন কোন জাতি ওযন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীব।
(০৩) যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠি চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।
(০৪) যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়।
(০৫) যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন।[সহিহ ইবনে মাজাহঃ ৪০১৯]
প্রিয় পাঠক, এই হাদিস থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে, রাসুল সাঃ দেওয়া পাঁচটি ভিবিষ্যৎ বানীর প্রেক্ষিতে পাঁচটি আযাব/গযব নির্ধারিত। যা আমরা অবলোকনও করছি হারে হারে। আর আজকের করোনা কিংবা কভিট৯০ নামক যে ভাইরাস বা মহামারী, তা তো স্পষ্ট যে, এটি সম্পর্কে আগের কোনো ধারনাই নাই এই মনুষ্য প্রাণীর। লক্ষ্য করুন, হাদিসে রাসুল সাঃ সেটিই বলেছেন এক নম্বর কারন হিসাবে। সমাজে অশ্লীলতা যখন প্রকাশ্য রুপ লাভ করবে, তার বিপরীতে গযব হিসাবে এমন মহামারী আসবে যা সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারনাই থাকবে না।
এই ভাইরাসও হয়ত একদিন শেষ হবে, ভ্যাক্সিন কিংবা টিকা বের করার সক্ষমতাও দেবে দেবেন রব্বুল আলামীন। কিন্ত তাই বলে কি আর কোনো গযব আসবে না? আসবে, একের পর এক এরকম নতুন নতুন গযব আপতিত হবে যতৎক্ষন না মানুষ এই অশ্লীলতার পথ পরিহার না করবে। এর আগে এইচআইভি নামক মহামারীর বেলায়ও এটি প্রমানিত হয়েছে, এসব যে এই অশ্লীলতারই ফল। আজকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেপায়াপনা যেন ডাল-ভাতের মত অবস্থা। এর মাধ্যমে কেবল আল্লাহর সাথেই গাদ্দারি করছি না, আমরা ইচ্ছা করেই একটি জেনারেশনকে ধ্বংস করছি।
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন এই মহামারী থেকে আমাদের রক্ষা করুক। একটি সুখি, সুন্দর, অশ্লীলতা মুক্ত সমাজ গঠনের তৌফিক দান করুক।
[ লেখকঃ গোলাম রব্বাণী রোমান। কামিল (হাদিস), বিএ অনার্স, এমএ, এমফিল গবেষক, ঢাবি। চেয়ারম্যান, হলিটাচ্ স্কুল এন্ড কলেজ, সোনাতলা, বগুড়া।]