চিরিরবন্দরে আশংকাজনক হারে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ, অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা

SangbadAjKalSangbadAjKal
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:52 PM, 05 September 2016

মো. মিজানুর রহমান (মিজান), চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: চিরিরবন্দরে আশংকাজনক হারে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা ও আতংক বিরাজ করছে।

উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের ১৪১ টি গ্রাম ও ১২টি গুচ্ছ গ্রামের আনুমানিক ৩ শতাধিক দম্পতি গত ৩ বছরে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন। জরিপ চালিয়ে কারণ হিসেবে জানা গেছে অল্প বয়সে বিবাহ হয়ে ঘনঘন অসুস্থ হয়ে স্বাস্থ্যহানি হওয়া, যৌতুকের দাবী মেটাতে না পারা, দাম্পত্য কলহ, স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোনকে সহজভাবে মেনে না নেয়া, অপরিণত বয়সে সংসারের চাপ সামলাতে না পারা, পারিবারিক সহিংসতা, দীর্ঘদিন স্বামীর বিদেশে থাকা, স্বামী-স্ত্রীর পরকিয়া, স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হওয়া, স্বামী নেশাগ্রস্থ হওয়া, স্বামী- স্ত্রীর সন্দেহজনক চলাফেরা, স্বামীর গভীর রাতে বাড়ী ফেরা, পিতা-মাতার পছন্দে জোর করে বিয়ে দেয়া, রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই গোপনে পালিয়ে বিয়ে করে সালিশে বিচ্ছেদ করা,পুরুষত্বহীনতা, স্বামীর একাধিক বিবাহ করা, স্বামী-স্ত্রীর মারাত্মক যৌন ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, স্বামীর নিষ্ঠুর আচরণ, শ্বশুর শ্বাশুরীর নিষ্ঠুর বকুনি ও অত্যাচারসহ ইত্যাদি কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে।

আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের আলিম উদ্দিনের মেয়ে লাভলী বেগমের সংগে কথা হলে সে জানায়, ৭ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই শ্বশুর বাড়ীতে ননদের,স্বামীর ও শ্বাশুরীর অব্যাহত বকুনি, অকারণে মারধর, যৌতুকের টাকা বাকী থাকায় বাবার বাড়ীতে যেতে না দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে বনিবনা না হওয়ায় ১৫ বছরে মা হওয়ার পর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। নির্যাতনের কারণে আদালতে নারী নির্যাতন ও মোহরানা মামলা চলমান রয়েছে। একই গ্রামের আকলিমা, মাহফুজা, বিউটি জানান, তাদেরও বনিবনা না হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। তারা আবেগঘন কন্ঠে আরও জানান, বর্তমানে গার্মেন্টেস এ চাকুরী করে চলছি। শিশু বয়সে বিয়ে করে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিচ্ছেদ হয়ে যায়। স্বামী অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় সেখানে আপোষের মাধ্যমে ফিরে যাওয়ারও সূযোগ নাই।

আব্দুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ময়েনউদ্দিন শাহ জানান, বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকানোর জন্য বেশ সময় নিয়ে রাগ থামানোর পরে সালিশের মাধ্যমে সবরকম চেষ্টা সত্তে¡ও অনেক সময় উভয়পক্ষকে মানানো যায়না। আদালতের বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশে আমরা জরুরী সমাধানের চেষ্টা করি। শতকরা ৬০ ভাগ সফল হওয়া যায়।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিবেদিতা দাস জানান, শিশু বিবাহ, যৌতুক ও পারিবারিক সহিংসতার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারীভাবে শিশু বিবাহ, যৌতুক ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে ও প্রতিরোধে জোরালো কাজ করা হচ্ছে।

চিরিরবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনিছুর রহমান বলেন, থানায় প্রায় প্রতিদিন দু-একটি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় মামলা বা অভিযোগ করার জন্য আসে, সেগুলো ভালভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।

শিশু বিবাহ, যৌতুক ও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে সম্মাননা পদকপ্রাপ্ত বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক মোরশেদ উল আলম বলেন, উভয়পক্ষের সহনশীল ও সহমর্মিতা এবং ধৈয্যশীল আচরণ ছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকানো সম্ভব নয়। জনগণকে সচেতন করতে জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, বহুব্রীহি, সমাজ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র , পলীশ্রীসহ বিভিন্ন এনজিও সরকারের সংগে একযোগে কাজ করলেও শিশু বিবাহ, যৌতুক ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ ও প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা। একমাত্র কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই তা সম্ভব।

আপনার মতামত লিখুন :