রমযানঃ জরুরী কিছু মাসায়েল

বার্তা বিভাগবার্তা বিভাগ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  03:22 PM, 29 April 2020

গোলাম রব্বাণী রোমান। এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চেয়ারম্যান, আন-নূর সাইন্টিফিক মাদরাসা, সোনাতলা, বগুড়া।

মুসলিম উম্মাহর এক অন্যতম আনন্দঘন মুহূর্ত হোল মাহে রমযান। ইসলামি সংস্কৃতির সুমহান নির্দেশনা এতে। মানব মনের কলুষতা মুক্ত জীবন ও গুনাহ মাফের অপার অনুগ্রহ এ মাস। বৈচিত্র্য ভেদে রোযা ফরজ (আবশ্যক) ছিল এক আল্লাহতে বিশ্বাসী প্রতিটি উম্মাহর (জাতি) উপরে। আল্লাহ “ (1) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا الَّذِينَ كُتِبَ عَلَى مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿البقرة: ١٨٣﴾ তা’আলা বলেন-

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (২: ১৮৩)

পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের এ মাস পেয়েও যারা পরিবর্তন হতে পারলনা তাদের ধ্বংস অনিবার্য। রাসুল সঃ বলেন “ যে রমযান মাস পেল অথচ তার গুনাহ মাফ করে নিতে পারলনা সে ধ্বংস হোক।” (বোখারি,আল আদাবুল মুফরাদ-৬৪৬)

দেখা যায় আমরা অনেকি রমযান মাস পেয়েছি এবং গুনাহ মাফের প্রস্তুতিও নিচ্ছি কিন্তু না জানার কারনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুল করে ফেলছি। তাই সাধারন পাঠকদের উদ্দেশে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল বর্ণনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ্‌।

০১। চাঁদ দেখে রোযা রাখা ও ছাড়াঃ
নিজ ভূখণ্ডের মধ্য থেকে নিজে অথবা বিশ্বাসযোগ্য কোন একজন মুসলিমের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দানের মাধ্যমে রোযা রাখতে হবে এবং ছাড়তে হবে। (বোখারি-১৯০০)

উল্লেখ্য যে, ইদানীং কালে কিছু ফেতনার আবির্ভাব হয়েছে যে, সওদি আরবের সাথে রোযা রাখবে এবং ঈদ করবে। যে ব্যাপারে তাদের খোঁড়া যুক্তি শরীয়তের দলিলের কাছে মোটেই টেকেনা। বরং নিজ ভূখণ্ডের ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল বিদ্যমান। ( মুসলিম- ১০৭৮,আশরাহুল মুমতে ৬ এর ৩২১-৩২২ আল উসাইমেন)

০২। নিয়ত ছাড়া রোযা হবেনাঃ-
সেহেরী খাওয়ার পূর্বেই নিয়ত করতে হবে নচেৎ রোযা রাখলেও তা আদায় হবেনা বরং কাজা আদায় করতে হবে। তবে হ্যাঁ রমযান মাসে নিয়ত না করে কেও রোযা রাখলে তার সে দিনের রোযা হবেনা বটে কিন্তু সারাদিন রমজানের সন্মানারথে কিছু খাওয়াও যাবেনা। (সহিহ আত তিরমিজি-৭৩০)

জ্ঞাতব্য যে, নিয়ত মানে সংকল্প। মনের মধ্যে ধারনা থাকলেই চলে। মুখে আরবি কিম্বা বাংলায় কোন কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নাই।

০৩। সাহারিঃ-
[ দ্রুত ও বিলম্বে খাওয়া অভয়টাই সুন্নত। ফজরের সাদা রেখা স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত এর শেষ সময়। ( কুরআনঃ২-১৮৭, বুখারি-৫৫২)

[ হাতে খাবার প্লেট অথবা ঘুম থেকে এমন সময় উঠেছে যখন আজান দিচ্ছে, তখনো পেট পূর্ণ করে খাবে এতে দোষ নেই। (আবু দাউদ ২৩৫০, বায়হাকি ৪-২১৮ সহিহ)

[ ঘুম থেকে দেরিতে উঠার পর জানা গেলো আজান হয়ে গেছে, তখন আর খাওয়ার সুযোগ নেই। কেও আজানের পর খেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে, কাজা আদায় করতে হবে, তবে সারা দিন কিছু খাবেনা।

[ সামান্য কিছু হলেও সাহারিতে খেতে হবে। নচেৎ রোযা হবেনা। তবে অসুস্ততা বা অজ্ঞাতসারে না খেলেও রোযা পূর্ণ হবে ভাঙ্গা যাবেনা। ( মুসলিম ১৯৬)

[ রাতে যে কোন কারনে অপবিত্র হয়ে গেলে সে অবস্থায়ও সাহারি খাওয়া জায়েজ আছে। তবে সাহারির পরে হলেও যথাদ্রুত পবিত্রতা অর্জন করা উত্তম। ( মুসলিম ১১১০)

০৪। ইফতারিঃ-
[ইফতারি দ্রুত করাই উত্তম অথচ আমাদের সমাজে এক ধরনের প্রচলন আছে যে, ইফতারিতে সময়ের পরেও হাতে ৫ মিঃ সময় রাখা এবং সাহারিতে সময়ের ৫মিঃ পূর্বেই আজান দেওয়া। যা একধরনের বিদআত (শরীয়তে নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার। বিদআতে অভ্যস্তরা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। সহিহ মুসলিম ৮৬৭) বুখারি-১৮৫৬

[প্রথমে খেজুর ও পানি দিয়ে রোযা ছাড়াটাই উত্তম। (আবু দাউদ ২৩৫৭ সহিহ)

[ কিছুই না পারলে বিসমিল্লাহ বলে খানা শুরু করবে। পারলে নিম্নক্ত দোআ পাঠ করবে

« ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ ».
“পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।” [সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]

অপর বর্ণনায় যে এসেছে

«اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ »
“হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।” [সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮] আমল যোগ্য – আলবানী।

০৫। তারাবীহঃ-
[২০ রাকাত এবং বিতের সহ ২৩। অথবা ৮ রাকাত এবং বিতের সহ ১১। উভয়টাই জায়েজ যা সহিহ রেওয়াতে ( সুত্রে) বর্ণীত। তবে রাসুল সঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম এই ছলাতটি দীর্ঘ সময় নিয়ে আদায় করতেন। কখনো রাকাত সংখ্যা কমিয়ে অথবা বারিয়ে (বুখারি ৯৯০,১১৪৭)

অথচ এনিয়ে আমাদের সমাজে যা ঘটে তা সত্যিই দুঃখ জনক। জ্ঞানের স্বল্পতা এবং গোঁড়ামি ছাড়া বৈ কি।

[ মহিলারাও এই ছলাতে পুরুষদের পিছনে জামায়াতে অংশ নিতে পারবে। আলাদা জামাত করতেও দোষের কিছু নাই। তাদের মধ্য থেকেই একজন ইমাম হবেন, যিনি কিনা তাদের কাতারেই দাঁড়াবেন পুরুষদের মতো সামনে দারাবে না।

উল্লেখ্য যে পুরুষ ও মহিলার ছলাতে এতটুকুই পার্থক্য । অন্যকোন পার্থক্য বলে সমাজে যা প্রচলিত তা সম্পূর্ণই বিদআত।

আপনার মতামত লিখুন :