শুক্রবার জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

বার্তা বিভাগবার্তা বিভাগ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  09:16 AM, 15 May 2020

আজকাল ডেক্সঃ শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসবের দিন। এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও গোটা জগতকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রমজানেই আল্লাহ’র ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিজেদের সকল গোনাহ মাফ করিয়ে নিতে হবে প্রতিটি মুসলিমের। এটিই রমজান মাসের দাবি ও শিক্ষা। মাহে রমজানে জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম।

পবিত্র মাহে রমজানে জুমার দিনে মুসল্লীদের দোয়া কবুল করেন মহান আল্লাহু তায়ালা। জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ ইবাদত এবং এই ইবাদতে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত। কোরআনুল করীমে বর্ণিত আছে, ‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সূরা জুমআ: আয়াত ৯)

বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ বুখারী শরীফে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত আছে জুমা সম্পর্কে। সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে, নামাজের জন্য মসজিদে আগে আগমন করে সে যেন একটি উট কোরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কোরবানী করল। যে তৃতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আসল সে যেন একটি মুরগী কোরবানী করল, পঞ্চম পর্যায়ে যে আসল সে যেন একটি ডিম কোরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবা দেওয়ার জন্য বের হন তখন ফিরিশতাগণ জিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন। (বুখারী ২য় খণ্ড ৮৩৮)

হযরত সালমান ফার্সী (রা.) বলেন, মহানবী (স.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, নিজের তেল ব্যবহার করে, নিজের ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর বের হয় এবং দুজন লোকের মাঝে ফাঁক না করে তারপর তার নির্ধারিত নামাজ আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে তাহলে তার জুমআ থেকে আরেক জুমআ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী ২য় খণ্ড ৮৩৯)

জুমার দিনকে মুসলমানদের জন্য ইবাদতের দিন ও দোয়া কবুল হওয়ার দিন বলা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি মহান দিন। এ দিনটির সম্মান ও মর্যাদার জন্য ইহুদি-নাসারাদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

পরবর্তীতে ইহুদিরা শনিবারকে আর খ্রিস্টানরা রোববারকে তাদের উপাসনার দিন নির্ধারণ করলেও আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য শুক্রবারকে ইবাদতের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।

আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, এক ইয়াহুদি তাকে বলল, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদি জাতির ওপর অবতীর্ণ হতো, তবে অবশ্যই আমরা সেই দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করতাম, তিনি বললেন, ‘কোন আয়াত’? সে বলল, ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সূরা মায়েদা: আয়াত ৩)

হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘এটি যে দিনে এবং যে স্থানে রাসূল (স.) এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি। তিনি সেদিন আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুমুআ’র দিন।’ (বুখারি)

হে মুসলমান! জুমার দিনকে আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের জন্য শুক্রবারকে ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। তোমরা এদিন মিসওয়াক কর, গোসল কর ও সুগন্ধি লাগাও।’ (মুয়াত্তা, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)।

অন্য হাদিসে আরো বলা হয়েছে, জান্নাতে প্রতি জুমার দিনে জান্নাতিদের হাট বসবে। জান্নাতি লোকেরা সেখানে একত্রিত হবেন। সেখানে এমন মনমুগ্ধকর হাওয়া বইবে, যে হাওয়ায় জান্নাতিদের সৌন্দর্য অনেক গুণে বেড়ে যাবে এবং তাদের স্ত্রীরা তা দেখে অভিভূত হবে। অনুরূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি স্ত্রীদের বেলায়ও হবে। (মুসলিম)

জুমার রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মারা যান; আল্লাহ তা`আলা তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেন।’ (তিরমিজি

আপনার মতামত লিখুন :