ফরম পূরণে বাধায় কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাবের অভিযোগ

বার্তা বিভাগবার্তা বিভাগ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:22 AM, 26 December 2019

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় মঙ্গলবার সকালে এইচ এস সি ফরম পূরণে বাধা পেয়ে কলেজ অধ্যক্ষের বাসার সামনে বিষ পানে এক ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এছাড়া কলেজের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসুস্থ ছাত্রী হলো, খুলনার দৌলতপুর থানার মধ্যডাঙ্গা এলাকার লিটন মোল্লার মেয়ে আফরিনা মেহেদী। সে কালিয়াকৈর ডিগ্রি কলেজের কমার্স বিভাগ থেকে এইচ এস সি পরিক্ষার্থী। সে উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় এক বাসা বাড়িতে তার এক বোনসহ লেখাপড়া করে আসছে।

এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও অসুস্থ ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় কালিয়াকৈর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আঃ হাই’র বাসার সামনে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী সম্প্রতি হয়ে যাওয়া টেস্ট পরিক্ষায় তিন বিষয়ে ফেল করে। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, কলেজের শিক্ষক সুরুজ্জামান ও খলিলুর রহমান খলিল তাকে বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তাদের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা ইচ্ছা করেই তাকে ফেল দেয়া হয়েছে বলেও তার অভিযোগ। এসব বিষয়ে তার মুঠোফোনে অডিও-ভিডিও রেকর্ড আছে বলেও জানায় ওই ছাত্রী।

এদিকে চলতি বছরই তার পরিক্ষা দেওয়ার মেয়াদ শেষ হবে বলে ফরম পুরণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার ধন্যা দিচ্ছে ওই ছাত্রী। কোনভাবেই যেন তার ফরম পুরণ হচ্ছিল না। এদিকে অধ্যক্ষ আঃ হাই ছুটি ছাড়াই কিছু দিন ধরে কলেজে না আসায় ওই ছাত্রী আরো বিপাকে পড়ে। যার কারণে বাধ্য হয়েই সে কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় ওই অধ্যক্ষের বাসায় যায়। কিন্তু ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে তার স্ত্রী উল্টো তাদের সামনে ওই ছাত্রীকে নানাভাবে অপমানিত করে। এ সময় তার স্ত্রী ওই ছাত্রীকে বলে দেয় তুমি কি শেখ হাসিনা হইছো? এমন কি তাকে আগামী ১ জানুয়ারী টিসি দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। পরে বাসার গেইটের সামনে থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়। পরে ওই ছাত্রী কৌশলে কলেজ অধ্যক্ষের বাসার সামনেই বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এসময় তার সহপাটীরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বর্তমানে সে ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ হাসপাতালে যান এবং ওই ছাত্রীর সাথে কথা বলেন। এ ঘটনার পর তার সহপাঠীরা হাসপাতালে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক সুরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, তার সাথে ফোনে কথা হলেও কোনো কু-প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত অপর শিক্ষক খলিলুর রহমান খলিল মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে, সেটা মিথ্যা বানোয়াট।

কালিয়াকৈর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আঃ হাই জানান, ওই ছাত্রী বিষ পান করেছে বলে শুনেছি। ফেল করেও ফরম পুরণ করার জন্য সে এই পথ অবলম্বন করেছে। কলেজে অনুপস্থিতি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী টেস্ট পরিক্ষায় ফেল করেছে। তারা ও তাদের অভিভাবকরা কলেজে এসে বিরক্ত করে যার কারণে কদিন ধরে কলেজে যাই না। এছাড়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি মিথ্যা। তবে আমার স্ত্রী তাকে টিসি দেওয়ার কথা বলতে পারে না।

কালিয়াকৈর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, ফরম পুরনের সময় ওই অধ্যক্ষ কলেজে থাকেন না, এটা নিয়মে পড়ে না। তবে ফরম পুরণে বাধা পেয়ে বিষ পানে ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করার বিষয়টি আমার জানা নেই।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন মজুমদার জানান, খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :